Tuesday, April 5, 2011

গুলি চালিয়ে কোরআন রক্ষার আন্দোলন দমানো যাবে না -মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ



 04-04-2011

রোববার যশোরে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে একজন কোরআনের হাফেজ নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, গুলি চালিয়ে কোরআন রক্ষার আন্দোলন দমানো যাবে না। রাজধানীতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম এক বিবৃতিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে আলেম ওলামার ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও শত শত লোককে গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের যে দাবানল জ্বলে উঠেছে তাতে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি শায়খ আবদুল মমিন,মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক বিবৃতিতে কোরআন রক্ষার হরতাল সফল করায় জনতাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এছাড়া পুলিশের হামলার নিন্দা ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন।

বেপরোয়া পুলিশি অ্যাকশন ও শাসক দলের ক্যাডারদের ব্যাপক হামলা-সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্য দিয়ে গতকাল ওলামা মাশায়েখদের হরতাল সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর পল্টন, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, ধামরাই, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, খুলনা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন এলাকা। পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে শান্তিপূর্ণ মিছিলরত হরতাল সমর্থক মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক-মুসল্লিদের ওপর মারমুখী সশস্ত্র পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। লাঠিপেটা করে রাস্তায় ফেলে বুটের লাথি মেরে, রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে পুলিশ ক্ষতবিক্ষত করেছে মুসল্লিদের।

কোরআনবিরোধী নারীনীতি, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি এবং ফতোয়াবিরোধী রায় বাতিলের দাবিতে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ আহূত এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম সমর্থিত গতকালের হরতালে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগ ছিল বন্ধ। রাজধানীর ভিআইপি সড়কে পুলিশ পাহারায় সীমিতসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার যানবাহন চলেনি।

অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছিল প্রায় যানবাহনশূন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হরতাল সমর্থকদের অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে রেল চলাচলও বিঘ্নিত হয়। হরতাল ঠেকাতে পুলিশ ঢাকায় ২২৬ জনসহ সারাদেশে ৫ শতাধিক হরতাল সমর্থক মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, বুট ও রাইফেলের বাঁটের আঘাত, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিতে আহত হয়েছে তিন শতাধিক। এদের মধ্যে ৮৭ জন গুরুতর আহত হয় বলে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি দাবি করেছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন।

গতকাল ফজরের নামাজের পর থেকেই কাফনের কাপড় পরে কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন হরতাল সমর্থক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা রাস্তায় নামেন। তারা নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। রাস্তা অবরোধ করে জিকির ও নামাজ আদায় করেন। তাদেরকে হটাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

ঢাকায় আটক ২২৬ : রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সকালে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। মোহাম্মদপুরে হরতাল সমর্থনকারীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পিকেটারদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলাকালে পল্টনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ ১২৫ জনকে আটক করে বলে ডিএমপি কন্ট্রোলরুম জানিয়েছেতবে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আহলুল্লাহ ওয়াসেল দাবি করেছেন, পল্টন, কামরাঙ্গীরচর, কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, রমনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২২৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে পল্টন থানায় ১৩০ জন, রমনা থানায় ৩৫ জন, মিরপুর থানায় ১৩ জন, কাফরুল থানায় ৪ জন, শাহবাগ থানায় ২৮ জন, শাহ আলী থানায় ৮ জন, বনানী থানায় ১৮ জন, সাভারে ৫ জনসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বাকিদের রাখা হয়েছে। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে লালবাগ মাদ্রাসায় নিয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে।

এদিকে পল্টন এলাকা থেকে ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামীকে পুলিশ আটক করলেও কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। নয়াপল্টনের মুসলিম লীগের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি তৈয়ব ও আমিনীর জামাতাসহ ৩৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি হামলায় আহত হন মুফতি তৈয়ব ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা আবুল কাশেম। এছাড়াও মহাখালী, উত্তরা, খিলক্ষেত, আজমপুর, নিউমার্কেট, সাতমসজিদ রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। মিছিলগুলোর সামনে-পেছনে ছিল কড়া পুলিশ পাহারা।

মোহাম্মদপুর : সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুর বাস টার্মিনালের কাছে জামেয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাঠিপোটায় সেখানে ১০/১২ জন আহত হয় বলে জানা যায়।

শান্তিনগর-কাকরাইল : সকাল ৭টার দিকে শান্তিনগরস্থ আল্লা-রসুল মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ২৫ ছাত্রকে আটক করে। পরে মিছিলটি কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির পাশ দিয়ে বেইলি রোডে এলে পুলিশ আবারও বাধা দেয়।  এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আরও ২৫ ছাত্রকে আটক করে।

কাকরাইলে সকালে হরতালের সমর্থনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখান পুলিশি হামলায় ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি তৈয়ব, মহানগর আমির মাওলানা আবুল কাশেম ও কর্মী সোয়াইব আহমেদ আহত হন।

পল্টন ও বায়তুল মোকাররম : ভোর থেকেই ফকিরাপুল, পল্টন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ পুরো এলাকা কর্ডন করে ফেলে পুলিশ। বেশ কয়েক দফা পিকেটাররা রাস্তায় নামলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সকাল সোয়া ছয়টার দিকে পল্টনে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে পিকেটাররা জমায়েত হতে শুরু করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়। পুলিশ এ সময় ওই স্থান থেকে ৯ যুবককে আটক করে।

সকাল ১০টার দিকে পল্টন মোড়ে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পুলিশ এ সময় ৯ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামীও ছিলেন। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হরতালের সমর্থনে সমাবেশ করা হয়। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন সেখান থেকে মিছিল করতে চাইলে কড়া পুলিশি পাহারায় তা সম্ভব হয়নি।

সকাল ৯টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে পুলিশ আরও তিনজনকে আটক করে। পুলিশের দাবি, তারা মিছিল শেষে মসজিদে ঢুকে আবার সমবেত হওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে আটককৃতরা জানান, তারা মসজিদে ঢুকে পরিস্থিতি দেখতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আটককৃতরা হলেন চাঁদপুর মতলবের নারায়ণপুর মাদ্রাসার ছাত্র মো. আবদুর রহমান (১৮), চট্টগ্রামের হাটহাজারী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ওমর ফারুক (১২), নারায়ণগঞ্জ দেওভোগ মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. শাহ পরান (১৬)।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুরানা পল্টন কালভার্ট রোড এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার জন্য কর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় তারা দৌড়ে ছাত্র জমিয়ত কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়।

হাইকোর্ট-শাহবাগ এলাকা : হরতালের সমর্থনে দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পুরনো ঢাকা থেকে একটি মিছিল হাইকোর্ট এলাকায় এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ পিকেটারদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হন ইসলামবাগ জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র নাজমুল আহসান। পরে পুলিশ তাকে আটক করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে।

শাহবাগে পিকেটিংয়ের সময়ে সকালে ২০ জনকে আটক করে শাহবাগ থানা হাজতে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার মহসিন।

মিরপুর গাবতলী : সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে। এখান থেকে পুলিশ ৭ জনকে আটক করে। মিরপুর গোলচক্কর এলাকায় সকালে অন্তত এক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল বের করে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা হঠাত্ করে হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

কল্যাণপুর : সকাল ৮টার দিকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে ফুরফুরা শরীফের ২০/২৫ জন কর্মী সবগুলো বাস কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শ্যামলী পরিবহনের মো. হাফিজ জানান, দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। গাবতলী থেকে আন্তঃজেলা কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

পুরান ঢাকা : পুরান ঢাকার লালবাগ, আজিমপুর, কোতোয়ালি এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে গতকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। রাজধানীর চকবাজারের পাইকারি বাজার গতকাল বন্ধ ছিল। চকবাজারের পূর্ব পাশের মৌলভীবাজারেরও কোনো দোনপাট খোলেনি। সকালের দিকে ব্যবসায়ীরা দোকানের সামনে এলেও পরে দোকানপাট না খুলেই চলে যান। এদিকে লালবাগ, আজিমপুর, সোয়ারীঘাট, মিটফোর্ড রোড, বাবুবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, সদরঘাট, কাপ্তানবাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট প্রায় বন্ধ ছিলদু’একটি দোকানের শাটার খুললেও তারা পুরোপুরি দোকান খোলেনিরাস্তায় চলতে দেখা গেছে সিএনজি স্কুটার। দু’একটি গাড়ি ছাড়া পুরান ঢাকায় প্রাইভেটকার রাস্তায় নামেনি। তবে রিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সকাল থেকে চকবাজার টু গুলিস্তানের লেগুনা টেম্পোও চলাচল করতে দেখা যায়। তবে পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গিরচর এলাকা থেকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির পৃথক পৃথক মিছিল বের হয়।

হাজারিবাগ কামরাঙ্গীরচর :
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজারীবাগ এলাকা থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কিছু দূর যাওয়ার পরই পুলিশি বাধায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সকাল ১১টার দিকে কামরাঙ্গিরচরের আশ্রাফাবাদ এলাকা থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি লালবাগের দিকে আসার সময় কামরাঙ্গিরচর ব্রিজের কাছে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। তখন মিছিলকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

যাত্রাবাড়ী : যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও ওলামা মাশায়েখরা সকাল থেকেই হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করে। তাদের সঙ্গে কয়েক দফা পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি মিছিল বের হলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে যাত্রাবাড়ীর জামিয়া আবু বক্কর মাদ্রাসার ছাত্র আবদুল খালেক গুরুতর আহত হনতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। কোনো বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চলাচলও ছিল বন্ধ। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা ছিল না বললেই চলে। ক্লাম রুমে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তবে প্রশাসনিক ভবন খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় কাটিয়েছেন।

এদিকে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ

সানারপাড় সাইনবোর্ড শিমরাইল : হরতালের সমর্থনে সানারপাড়, সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয় ওলামা মাশায়েখগণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা রাস্তার ওপর জিকির করে, নফল নামাজ পড়ে, সেজদা করে, মোনাজাত করে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় বেশকিছু গাড়ি আটকা পড়ে। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ও র্যাব তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য অ্যাকশনে নামে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পরিবহন শ্রমিক লীগের ক্যাডাররা। বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়াশেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও শটগানের গুলি চালিয়ে অবরোধকারীদের সড়ক থেকে হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে। আরো ফোর্স নিয়ে র্যাবসহ পুনরায় ওলামা মাশায়েখদের ওপর হামলা চালানো হয়। একের পর এক টিয়ারশেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করেও হরতালকারীদের সড়ক থেকে হটাতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয় পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ : গতকাল ভোর থেকে হরতাল সমর্থনকারী পিকেটাররা শহর ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব এলাকায় অবস্থান নেয়  বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। তাদের পিকেটিংয়ের কারণে যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট ছিল বন্ধ। বেলা যত গড়াতে থাকে রাস্তায় পিকেটারদের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে। পিকেটাররা রাস্তায়ই সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। শহরে মাঝে মধ্যে পুলিশ হরতালকারীদের দিকে এগুবার চেষ্টা করামাত্রই পিকেটাররা লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে অবশেষে মূল শহরে পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি। ফতুল্লা থানার পাগলা এলাকায় হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে হরতাল পালিত হয়েছে।
 
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের সঙ্গে পিকেটারদের ব্যাপক সংঘর্ষে পুলিশ, র্যাব ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। এদের মধ্যে বেশ ক’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত হরতাল সমর্থনকারী পিকেটারকে। ভোর ৬টা থেকে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে আগত ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে।


সকাল ১১টায় আন্দোলনকারীরা কত সময় পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান করবে এ নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষ জানায়, সাদি হুজুর, বশির উল্লাহ হুজুর ও আজাদ হুজুর নির্দেশ দিয়েছেন ১১টায় রাস্তার ওপর দোয়া করে সবাইকে যার যার মাদ্রাসায় চলে যাবার। কিন্তু অপরপক্ষ পিকেটারদের জানিয়ে দেয়, আমিনী হুজুর বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ অবরোধ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাইকে রাস্তায় অবস্থান করার নির্দেশ দেন। ফলে হরতাল সমর্থনকারীরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আর এ সুযোগে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী, অনাবিল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল বাবু তার পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে জলকামান নিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।

দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাহার হোসেনের নির্দেশে ডিএমপির উপ-কমিশনার গাজী মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে তিন দিক থেকে র্যাব ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর শটগানের গুলি, রাবার বুলেটসহ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় হাতে গজারি লাঠি ও রড নিয়ে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের শতাধিক ক্যাডার। তারা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড ও লঠিসোটা নিয়ে অবরোধকারীদের ওপর হামলা চালায়।

একপর্যায়ে আন্দোলনকরীরা রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকান, আশপাশের বাড়ি ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। ক্যাডাররা সেসব জায়গা থেকে তাদের ধরে এনে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অবরোধকারীরা পুনরায় জড়ো হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। 

 সংষর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশের কনস্টেবল ইব্রাহিম, রানা, এএসআই মালেক, মনির, বিপুল, র্যাব সদস্য মতিউর, সাংবাদিক মনির হোসেনসহ ৪ জন। আলী হোসাইন (হাতে ও পায়ে ৩টি গুলি), আব্দুল খালেক (মাথায় গুলিবিদ্ধ), জামিয়াতুল ইব্রাহিম ইসলামীয়া মাদ্রাসার ভিতরে চিকিত্সাধীন মাসুম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, খালিদ, মানসুর, শিহাব উদ্দিনসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। দুপুর আড়াইটায় পুলিশ পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হরতালবিরোধী মিছিল করে। এতে এলাকায় পুনরায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, ডেমরা, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।






সোনারগাঁও : হরতাল সমর্থকরা বেশ কয়েক দফা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাদের তুলে দেয়। এ সময় কয়েক দফায় মৃদু সংঘর্ষ হয়েছে।

চট্টগ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ : চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং পুলিশের গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিন মাদ্রাসা ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  হরতালে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম। নগরী ও জেলার শতাধিক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা।

বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রামে এর আগে কোনো হরতালে এত বেশি স্থানে পিকেটিং হয়নি।

নগরীর চাইতেও কড়া হরতাল হয়েছে জেলার ১৪টি উপজেলায়। এসব উপজেলার প্রধান সড়কগুলো ছাড়িয়ে গ্রামের অলিগলিতেও সক্রিয় ছিলেন হরতাল সমর্থকরা।

চট্টগ্রামের সঙ্গে আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ও চট্টগ্রাম-ক্সবাজার সড়কে ব্যারিকেডের কারণে যানবাহন চলাচল করেনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে পণ্য লোডিং-আনলোডিং হলেও ট্রাক না চলায় খালাসকৃত পণ্য পরিবহন করা যায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনগুলো শিডিউল অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। তবে চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনের একটি ট্রেন পটিয়ায় আটকে দেয় হরতালকারীরা।

নগরীতে ভোর ৬টা থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে হরতাল সমর্থকরা। সকাল থেকে তারা ওয়াসা মোড়, দুই নম্বর গেট,
মুরাদপুর, কর্ণফুলী ব্রিজ, কালামিয়া বাজার, ইপিজেড গেট, আন্দরকিল্লা, বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে কঠোর পুলিশ পাহারায় মিছিল সমাবেশ করে। এ কারণে নগরীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

হাটহাজারী : হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের অন্তত ১০টি স্থানে অবরোধ করে। অবরোধের কারণে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবারের ওরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ২ শতাধিক বাস সকাল থেকে নগরীর অক্সিজেন বালুচরা এলাকা থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত এলাকায় আটকা পড়ে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সহায়তায় এসব গাড়ি গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে চাইলে পিকেটাররা বাধা দেয়। এ সময় তারা বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর করলে পুলিশ এবং গাড়ির যাত্রীরা মিলে পিকেটারদের ধাওয়া করে এবং তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ অক্সিজেন, বায়েজিদ, বালুচরা এলাকার কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। বালুচরা এলাকায় পুলিশ গুলি চালায়। এতে কয়েকজন পিকেটার গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশের গুলিতে আহত নাদেরুজ্জামান (২২) ও ইউসুফ (১৮) নামক দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জুয়েল নামে একজনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। বালুচরা এলাকায় আহত পুলিশ কনস্টেবল রফিককে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


পটিয়া : দক্ষিণ চট্টগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। হরতালে সাবেক মহকুমা শহর পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। ফজরের নামাজের পর পরই পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়ার (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) হাজার হাজার শিক্ষার্থী পটিয়ার রাজপথে নেমে আসে। তাদের সঙ্গে আরাকান সড়কে নেমে আসে চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগড়ার শত শত মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষক। রাস্তায় জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভড়কে যায়। তারা পিকেটারদের এড়িয়ে চলতে থাকে। অন্যান্য হরতালের মতো রাস্তায় র্যাব ও পুলিশকে দেখা যায়নি। পটিয়া কলেজ বাজার, ফকিরনীর হাট, শান্তির হাট, মুজাফ্ফরাবাদ, চন্দনাইশের দোহাজারীতে পিকেটিং করে কয়েকশ’ মাদ্রাসা ছাত্র।

সাতকানিয়া : পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। পিকেটারদের হামলায় জমির নামের লোহাগাড়া থানার এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন। ভাংচুর হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িও। তবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ঠাকুরদীঘি বাজারে অবস্থান নেয়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা সারাদিনই পিকেটিং করে।

রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ায় কাপ্তাই-চট্টগ্রাম, চৌমুহনী-রানীরহাটসহ বিভিন্ন সড়কে অবরোধ করে পিকেটাররা। তাদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

খুলনায় আহত অর্ধশত, আটক ৪ : পুলিশের লাঠিচার্জ, ভাংচুর, আহতসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল খুলনায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে পিকেটিং করার সময় নগরীর শিববাড়ি মোড়, পিটিআই মোড়, পশ্চিম রূপসা ঘাট এলাকায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও খেলাফত মজলিসের খুলনা মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা নাসিরউদ্দিনসহ ১০ জনকে আটক করে। হরতাল চলাকালে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।

সকাল সাড়ে ৭টায় পশ্চিম রূপসা ট্রাফিক মোড়ে পিকেটিং করার সময় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধস্তাধস্তি হয় এবং কয়েকটি স্কুটার ভাংচুর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।






 সিলেটে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। নগরজুড়ে ওলামা মাশায়েখদের খণ্ড খণ্ড মিছিল থেকে নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ধ্বনির গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো শহর। শহর থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। নগরীতে দু’একটি রিকশা চললেও বাস-ট্রাক চলেনি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ছাত্র জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ছাত্র মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি শহরে মিছিল করে। ইসলাম আইন বাস্তবায়ন কমিটি সিলেটে জরুরি সভা করে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এতে প্রখ্যাত ওলামা মাশায়েখরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, বিশ্বনাথেও নজিরবিহীনভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালের সমর্থনে উপজেলায়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

মৌলভীবাজারে আহত ১২ : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শ্রীমঙ্গল রোডের ভৈরব-বাজার এলাকায় শেখবাড়ি জামেয়া মাদেনিয়া কাওমিয়া মাদ্রাসার ছাত্র, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের মধ্যে এক সংঘর্ষে ২ পুলিশসহ ১২ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

  ফেনীতে হরতাল চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ করে। সকাল থেকে শহরে পুলিশের বাধার মধ্যেও বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটাররা পিকেটিং করেছে। মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

মানিকগঞ্জ : শহরে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে ও কাফনের কাপড় পরে পিকেটাররা বিক্ষোভ করেছে।

চুয়াডাঙ্গায়  হরতাল চলাকালে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। দোকানপাট ছিল বন্ধ। জেলার সরকারি বেসরকারি কার্যালয় ও ব্যাংক বীমা খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা সাড়ে ১১টায় হরতালের সমর্থনে জেলা বিএনপির সভাপতি অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা পিকেটিং ও মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

রাউজানে ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত : হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজানের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিকের বেশি আহত হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

মুফতি আমিনীর নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে কাফনের কাপড় পরে সহস্রাধিক ওলামা-মাশায়েখ উপজেলার রেল গেট এলাকায় অবস্থান নেয়। এতে করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুপুর ২টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। উপজেলার ২টি লঞ্চঘাট থেকে ৬টি নৌ-রুটে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। সকাল-সন্ধ্যা বন্ধ থাকে নদীবন্দরের সব কার্যক্রম। অর্ধদিবস ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল।

সাভারে হরতালকালে বিক্ষোভ সমাবেশ : হরতালে পিকেটিং করার অভিযোগে পুলিশ ৫ মুসল্লিকে আটক করে। সকাল ১০টায় সর্বস্তরের মুসলিম জনতার ব্যানারে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে রাজ্জাক প্লাজার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কাঁচাবাজার প্রদক্ষিণ শেষে মনসুর মার্কেটের সামনে গিয়ে পথসভায় মিলিত হয়। হরতাল চলাকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। আটককৃত ৫ পিকেটারকে পুলিশ সন্ধ্যায় ছেড়ে দিয়েছে।