Tuesday, October 26, 2010

খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/23/50121

কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা : আহমদুল্লাহ আশরাফ

স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, বর্তমানে দেশ ও জাতি ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। জনগণ সরকারের কর্মকাঙ্গে দারুণভাবে উদ্বিগ্ন ও উত্কণ্ঠিত। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকারকেই তার খেসারত দিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বর্তমানে ইসলাম ধ্বংসের হাতিয়ার হয়েছে। কোনো মুসলমানের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগান দিয়ে ইসলামের বিধান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি সরকার প্রধানকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের পতন ডেকে আনবেন না, অন্য দলের পাল্লা ভারি করবেন না। আসমানি বিধান বিষয়ে অনধিকার চর্চা করবেন না। ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আবু লাহাব, আবু জেহেল ও এজিদের মতো পরিণতি হবে। হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সম্মেলনে তার পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির আলহাজ আনিসুর রহমান জিন্নাহ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, হাজী জালাল উদ্দিন বকুল প্রমুখ।

Tuesday, October 12, 2010

আওয়ামী শাসনে দেশ ইসলামসহ বহুমুখী আগ্রাসনের শিকার : খেলাফত আন্দোলন


http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/11/48093

11-10-2010

আওয়ামী শাসনে দেশ ইসলামসহ বহুমুখী আগ্রাসনের শিকার : খেলাফত আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, আওয়ামী সরকারের দায়িত্বহীনতায় দেশের স্বাধীনতা এবং জাতিসত্তার মূলস্তম্ভ, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম ইসলামবিদ্বেষসহ দেশ বহুমুখী আগ্রাসনের শিকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ উঠিয়ে দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ভর্তি না করা এবং বোরকা পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নাস্তিক-মুরতাদদের দাবিতে নতজানু হয়ে পড়েছে।
তারা বলেন, দেশে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যেও চলছে তোড়জোড়। এজন্য সরকার সুপ্রিমকোর্টের একটি বিতর্কিত রায়কে পুঁজি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। বক্তারা বলেন, কোরআনের বিরুদ্ধে কোনো আইন বাংলার মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না। খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী প্রমুখ।

খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা

খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা : বোরকা নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলন

08-10-2010
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/08/47709

স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ্ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, পর্দা করা মুসলিম নারীদের জন্য ফরজ। পর্দা নারীর সতীত্ব রক্ষা ও ইজ্জত-সম্মান বৃদ্ধি করে। আল্লাহর এ বিধান পরিবর্তন করার অধিকার কারও নেই। ধর্ম পালন করতে হলে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে হবে। তিনি বলেন, মুসলিম নারীদের পর্দা পালনে বাধ্য করা ইসলামের বিধান ও অভিভাবকদের দায়িত্ব। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে কোরআন-সুন্নাহার বিধান পর্দার হুকুমকে শিথিল বা নিষিদ্ধ করার অধিকার হাইকোর্টের নেই। হাইকোর্টের এ রায় এ দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করেছে। অবিলম্বে এ রায় প্রত্যাহার করা না হলে মুসলমানরা নিজেদের ধর্ম-কর্ম ও ইমানের হেফাজতে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন শুরু করবে।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে আল্লাহর বিধান পরিপন্থী পর্দা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার প্রতিবাদে খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান ঢালী, মাওলানা সুলতান মুহিউদ্দিন প্রমুখ।
মাওলানা আশরাফ আরও বলেন, হাইকোর্টের এ রায়ে দেশে অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে, নারী ধর্ষণ, অপহরণ, ইভটিজিং বাড়বে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে, দেশে অশান্তি সৃষ্টি হবে, আল্লাহর গজব নেমে আসবে।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় কোনো ইমানদার মুসলমান মেনে নিতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না। সরকার তাদের দলীয় পলিসি আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করছে। তা রুখে দাঁড়াতে হবে। মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ কখনো ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে সরকারের পতন অনিবার্য।
মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, সংবিধান সংশোধন, সংযোজন ও আইন পরিবর্তনের অধিকার একমাত্র জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের ঘোষণা জাতীয় সংসদ অবমাননার শামিল। ইসলামকে ধ্বংস করার কোনো চক্রান্তই এ দেশের জনগণ সফল হতে দেবে না।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলে পুলিশের বাধার মুখে তা সংক্ষিপ্ত করা হয়।

Wednesday, October 6, 2010

Taliban in high-level talks with Karzai government, sources say - Washington Post

Courtesy: Washington Post : Wednesday, October 06, 2010.

http://www.washingtonpost.com/wp-dyn/content/article/2010/10/05/AR2010100506249.html?wpisrc=nl_natlalert

By Karen DeYoung, Peter Finn and Craig Whitlock
Wednesday, October 6, 2010; 2:43 AM

Taliban representatives and the government of Afghan President Hamid Karzai have begun secret, high-level talks over a negotiated end to the war, according to Afghan and Arab sources.


The talks follow inconclusive meetings, hosted by Saudi Arabia, that ended more than a year ago. While emphasizing the preliminary nature of the current discussions, the sources said that for the first time they believe that Taliban representatives are fully authorized to speak for the Quetta Shura, the Afghan Taliban organization based in Pakistan, and its leader, Mohammad Omar.

"They are very, very serious about finding a way out," one source close to the talks said of the Taliban.

Although Omar's representatives have long publicly insisted that negotiations were impossible until all foreign troops withdraw, a position seemingly buoyed by the Taliban's resilience on the battlefield, sources said the Quetta Shura has begun to talk about a comprehensive agreement that would include participation of some Taliban figures in the government and the withdrawal of U.S. and NATO troops on an agreed timeline.

The leadership knows "that they are going to be sidelined," the source said. "They know that more radical elements are being promoted within their rank and file outside their control. . . . All these things are making them absolutely sure that, regardless of [their success in] the war, they are not in a winning position."

A half-dozen sources directly involved in or on the margins of the talks agreed to discuss them on the condition of anonymity. All emphasized the preliminary nature of the talks, even as they differed on how specific they have been. All expressed concern that any public description of the meetings would undercut them.

"If you talk about it while you're doing it, it's not going to work," said one European official whose country has troops in Afghanistan.

Several sources said the discussions with the Quetta Shura do not include representatives of the Haqqani group, a separately led faction that U.S. intelligence considers particularly brutal and that has been the target of recently escalated U.S. drone attacks in northwestern Pakistan.

The Haqqani group is seen as more closely tied to the Pakistani intelligence service than the Quetta Shura, based in the southwestern Pakistani province of Baluchistan. But one Afghan source, reflecting tension between the two governments, said Pakistan's insistence on a central role in any negotiations has made talks difficult even with the Quetta group. "They try to keep very tight control," this source said of the Pakistanis.

Reports of the talks come amid what Afghan, Arab and European sources said they see as a distinct change of heart by the Obama administration toward full backing of negotiations. Although President Obama and his national security team have long said the war would not be won by military means alone, sources said the administration only recently appeared open to talks rather than resisting them.

"We did not have consensus, and there were some who thought they could do it militarily," said a second European official. The Europeans said the American shift began in the summer, as combat intensified with smaller-than-expected NATO gains despite the arrival of the full complement of new U.S. troops, amid rising U.S. public opposition to the war.

The United States' European partners in Afghanistan, with different histories and under far stronger domestic pressure to withdraw their troops, have always been more amenable to a negotiated settlement. "What it really boils down to is the Americans both supporting and in some cases maybe even participating in talking with the enemy," the first European official said. "If you strip everything away, that's the deal here. For so long, politically, it's been a deal breaker in the United States, and with some people it still is."

Whatever domestic political difficulties the administration may fear would result from a negotiated deal with the Taliban, this official said, would be resolved by ending the war earlier rather than later. "A successful policy solves the political problem," he said.

U.S. officials depicted a somewhat different progression leading to the same conclusion, insisting that the time for real negotiations has only now arrived. Although last fall's strategy review concluded that defeat of the Taliban was an unrealistic goal, it was followed this year by "a period of time where we've been focused on getting our inputs in place, moving resources into Afghanistan," a senior administration official said. The Afghan government has also been positioning itself for serious talks, he said, through international conferences in January and July, the convening of a "peace jirga," or council, in Kabul and last week's naming of the members of an official government reconciliation team.

"Now, yeah, there's a sense that we mean what we say" when voicing support for a political process, the official said. "The president's view is that we have to do these things at the same time. We can't take the approach that we're just going to be putting our foot on the gas on the military side of things and will get around to the political," he said.

Last month, Obama pressed his national security team to be more specific about what it meant by a political solution, and "reinforced" the need to be working simultaneously on the military and political sides of the equation, the official said.

Gen. David H. Petraeus, the top U.S. and NATO commander in Afghanistan, told reporters last week that high-level Taliban leaders had "sought to reach out" to the top level of the Karzai government. "This is how you end these kinds of insurgencies," he said.

The administration is under pressure to show progress in resolving the war before the deadline Obama has set of beginning a troop withdrawal next summer. "We all concur that this is a critical year in Afghanistan," Staffan de Mistura, the top U.N. representative in Afghanistan, said in remarks last week at the International Peace Institute in New York.

If the hypothetical endpoint is "that by July next year something will have to be clear," he said, the various players had to start thinking about how they were going to get there. "There is no military solution," he said. "We all know it. And by the way, the Taliban knows it too. . . . And there is only one format for the next months. . . . It is political dialogue, reconciliation, deal."

He predicted "very rough months" ahead, "when the maximum pressure is being exercised . . . by both sides at the same time in order to have a better position in terms of the so-called dialogue." Among the potential roadblocks, he cited opposition from a resurgent Northern Alliance, the non-Pashtuns who overthrew the Taliban with U.S. assistance in 2001, and division of the Taliban into "several groups."

De Mistura and the United States' European partners have urged the administration to reach out more forcefully to other countries in the region - including Russia, India and Iran - to become part of a negotiated solution in Afghanistan.

"In Iran, publicly they say the [foreign] troops have to go," said one European official who met recently with officials in Tehran. "But they know that if we leave without an arrangement, there will be trouble for them."

Sources differed on the location, content and number of the renewed discussions, with one saying a recent session had been held in Dubai, in the United Arab Emirates. This source said the Taliban representatives had floated some peace terms, including exile for Omar in Saudi Arabia with protection and treatment as a former head of state. Others close to the talks, however, said that while the discussions appeared genuine, they were nowhere near that level of specificity.

A senior Saudi official said there had been no meetings his government was aware of in his country since last year's talks ended.

The Saudis have the potential to play a key role in the talks, for political and religious reasons. Saudi Arabia was one of only three countries, along with the UAE and Pakistan, to give diplomatic recognition to the Taliban government in Afghanistan before 2001. As custodians of the two holiest sites in Islam, and with their Wahhabi tradition, the Saudis may have more religious credibility to shepherd negotiations with the Taliban than other Muslim countries.

In the fall of 2008, the Saudis agreed to host a secret dialogue between Taliban and Karzai government representatives while saying they would not formally bless them unless the Taliban agreed to three conditions - a public rejection of al-Qaeda, recognition of the Afghan government and relinquishment of Taliban arms. Those remain Saudi conditions, shared by the Karzai government and the Obama administration. The Saudis sat in on the meetings and briefed interested parties, including the United States, on what was said.

deyoungk@washpost.com

finnp@washpost.com

whitlockc@washpost.com

Tuesday, October 5, 2010

জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ


http://bangla.irib.ir/index.php/2010-05-01-08-09-34/2010-05-01-08-10-56/21735-2010-10-05-10-43-22.html

জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

(গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ যে ভাষণ দিয়েছেন তার পূর্ণ বিবরণ নিচে তুলে ধরা হল)


বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম । মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর সর্বশেষ রসূল (সাঃ) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) ও তাঁদের সহযোগীসহ পছন্দনীয় সাহাবী এবং সমস্ত নবী-রাসূলের প্রতি দরুদ পেশের পর মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাব ত্বরান্বিত করা এবং তাঁর বিশ্বস্ত ও শ্রেষ্ঠ সহযোগী হবার তৌফিক দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।

মাননীয় সভাপতি, ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়বৃন্দ,

এ বিশ্ব সমাবেশে আরো একবার উপস্থিত হবার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শুরুতেই আমি তাদের স্মরণ করছি যারা পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন সেইসব পরিবারসহ পাকিস্তানের জনগণ ও সরকারের প্রতি আমি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। বন্যা-দুর্গত নারী ও পুরুষরা আমাদের মতই মানুষ। তাই মানবিক দায়িত্ব হিসেবে তাদের প্রতি সহযোগিতা করতে আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।


আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি জাতিসংঘের ৬৪তম অধিবেশনের মাননীয় সভাপতি জনাব আলী আবদুস সালাম ট্রেকির প্রতি তার সমস্ত প্রচেষ্টার জন্য যেসব প্রচেষ্টা তিনি তার সভাপতিত্বের মেয়াদে সম্পন্ন করেছেন। আমি জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনের মাননীয় সভাপতি মিস্টার জোসেফ দিইসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।


বিগত কয়েক বছরে আমি কিছু আশা ও উদ্বেগের কথা বলেছি। পরিবার প্রথার সংকট, নিরাপত্তা, মানবীয় মর্যাদা, বিশ্ব অর্থনীতি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ন্যায়বিচার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার বিষয়ও স্থান পেয়েছিল আমার সেসব বক্তব্যে।


পুঁজিবাদী ও বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থা বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর ধরে কর্তৃত্ব করেছে। এ সময়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ব্যবস্থা দেশ বা সমাজগুলোর নানা সংকটের যথাযথ সমাধান করতে অক্ষম। তাই এ ব্যবস্থা এখন অচল হয়ে পড়েছে। আমি পুঁজিবাদী ও বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রধান দু'টি কারণ ও ভবিষ্যতের আদর্শ বিশ্ব-ব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্য বা দিকের চিত্র বিশ্লেষণের চেষ্টা করব।

ক. নানা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস

আপনারা সবাই এটা জানেন ঐশী প্রেরিত পুরুষ বা নবী-রাসূলরা মানবজাতিকে একত্ববাদ, ভালবাসা ও ন্যায়বিচারের দিকে আহ্বানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মানুষকে সৌভাগ্য বা সমৃদ্ধির পথ দেখানোর কাজ তাঁরা করেছেন। তাঁরা সত্যকে ভালোভাবে বোঝার জন্য এবং শির্ক বা অংশীবাদিতা, নাস্তিক্যবাদ ও আত্মস্বার্থকেন্দ্রিকতা পরিহারের জন্য মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের বাণীর মূল কথা ছিল এক ও অভিন্ন। প্রত্যেক নবী তাঁর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সত্যতার স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং পরবর্তী নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন। প্রত্যেক নবী নিজ যুগের জনগণের যোগ্যতা অনুযায়ী অতীতের খোদায়ী ধর্মের চেয়ে আরো উন্নত বা পূর্ণতর ধর্ম উপস্থাপন করেছেন। এভাবে মহান স্রষ্টা বা আল্লাহর সর্বশেষ নবী (সাঃ) আসা পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থেকেছে এবং শেষ নবী (সাঃ)'র মাধমে ধর্ম চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা পায়। তিনি যে ধর্ম উপস্থাপন করেছেন তা মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রের পরিপূর্ণ আদর্শ।


অন্যদিকে আত্মস্বার্থকামী ও দুনিয়াপূজারী মানুষেরা এইসব স্বচ্ছ বা পরিস্কার আহ্বানের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়িয়েছে এবং নবী-রাসূলদের বাণীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। নমরুদের দলবল বিদ্রোহ করেছিল হযরত ইব্রাহিম (আঃ)'র বিরুদ্ধে, ফেরাউনের দলবল বিদ্রোহ করেছিল হযরত মূসা (আঃ)'র বিরুদ্ধে এবং দুনিয়াপূজারী লোকেরা অবস্থান নিয়েছে হযরত ঈসা (আঃ) ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র বিরুদ্ধে। (সব ঐশী মহাপুরুষের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) সাম্প্রতিক কয়েক শতকে মানবীয় নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধগুলোকে পশ্চাদকামীতার কারণ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এমনকি এসবকে বিজ্ঞান, যুক্তি ও প্রজ্ঞার বিরোধী বলে প্রচার করা হয়েছে। পাশ্চাত্যে মধ্য যুগে তথা অন্ধকার যুগে ধর্মের কর্তা হবার দাবীদাররা মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল বলেই এই প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।


এভাবে মানুষকে খোদায়ী যোগসূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে মানুষকে নিজের প্রকৃত সত্তা বা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।


অথচ মানুষের রয়েছে বিশ্ব জগতের রহস্যগুলো বোঝার ক্ষমতা বা যোগ্যতা। তার মধ্যে রয়েছে সত্যকে জানার আগ্রহ। মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ও পরিপূর্ণতা অর্জনের স্বপ্ন দেখে। তারা সৌন্দর্য্য ও সত্যের জন্য তৃষ্ণার্ত এবং বিশ্বে তারা আল্লাহর প্রতিনিধি হবার যোগ্য। কিন্তু এতসব যোগ্যতা বা ক্ষমতার অধিকারী মানুষকে এমন এক বস্তুবাদী সত্তায় নামিয়ে আনা হয়েছে যার মিশন হচ্ছে ব্যক্তিগত ভোগ-লিপ্সাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি করা। এভাবে প্রকৃত মানবীয় প্রকৃতির স্থান দখল করেছে মানবীয় কূপ্রবৃত্তি।


মানুষ ও জাতিগুলোকে একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে প্রচার করা হয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি বা জাতির সৌভাগ্য অন্যদের সাথে সংঘাত এবং তাদের নির্মূল অথবা দমিয়ে রাখার ওপর নির্ভর বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। টিকে থাকার চেষ্টায় গঠনমূলক ও পরিপূরক সহযোগিতার পরিবর্তে ধ্বংসাত্মক সংঘাতকে পারস্পরিক সম্পর্ক বিন্যাসের ভিত্তি করা হয়েছে।


একত্ববাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে অর্থ-পূজা ও কর্তৃত্বের লালসা। অথচ একত্ববাদই হল ভালবাসা ও ঐক্যের চাবিকাঠি। খোদায়ী মূল্যবোধের ব্যাপক বিরোধীতায় জড়িত আত্মস্বার্থকামী বা স্বার্থান্ধরা দাস প্রথা ও উপনিবেশ চালু করেছে।


পৃথিবীর একটা বড় অংশই পাশ্চাত্যের কয়েকটি সরকারের কর্তৃত্বাধীন হয়। কয়েক কোটি মানুষকে দাসে পরিণত করে তারা। ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক কোটি পরিবার। উপনিবেশ-কবলিত দেশগুলোর সমস্ত সম্পদ, অধিকার ও সংস্কৃতি লুণ্ঠন করা হয়। তারা বহু দেশ দখল করে ও স্থানীয় লোকদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং তাদেরকে অপমান করে।


কিন্তু জাতিগুলোর প্রতিরোধের মুখে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং বিশ্বের দেশ বা জাতিগুলোর স্বাধীনতা স্বীকৃতি পায়। জাতিগুলো নিজ সম্মান, নিরাপত্তা ও সুখ-সমৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। গত শতকের প্রথম দিকে স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে সুন্দর কিছু শ্লোগান তৈরি করা হয়। এ সব শ্লোগান অতীতের পুরনো ক্ষত স্থানে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে বলে ব্যাপক আশাবাদ জেগে উঠেছিল। কিন্তু তাদের এ সাধ পূরণ হয়নি, বরং অতীতের চেয়েও আরো বেশী তিক্ত ঘটনা ইতিহাসে কলংকের সংখ্যা বাড়িয়েছে।


দু'টি বিশ্বযুদ্ধে, ফিলিস্তিন দখলের ঘটনায়, কোরিয়ার যুদ্ধে ও ভিয়েতনামের যুদ্ধে, ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের যুদ্ধে, আফগানিস্তান ও ইরাকে দখলদারিত্বের ঘটনায় এবং আফ্রিকা মহাদেশের নানা যুদ্ধে কয়েক শত মিলিয়ন বা ত্রিশ চল্লিশ কোটি মানুষ হতাহত ও শরণার্থী হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ, মাদকদ্রব্য উৎপাদন, দারিদ্র ও শ্রেণী-বৈষম্য ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় মার্কিন সরকারের মদদপুষ্ট একনায়কতান্ত্রিক ও বলপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলো এমনসব বড় অপরাধে জড়িত হয়েছে যার দৃষ্টান্ত খুবই বিরল।


নিরস্ত্রীকরণের পরিবর্তে পরমাণু বোমা, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যাপক মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে এবং এরফলে বিশ্ব আগের চেয়েও বেশী হুমকীর সম্মুখীন।


এভাবে ভিন্ন বা নতুন শ্লোগানের আড়ালে সেই পুরনো উপনিবেশবাদী লক্ষ্য ও দাস-প্রথাই অব্যাহত রাখছে তারা।

খ. বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা বা বিশ্ব-শাসন-ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠিত বা বর্তমান কাঠামো :

শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের শ্লোগান দিয়ে প্রথমে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা লীগ অব নেশন এবং এরপর জাতিসংঘ গঠন করা হয়। বাস্তবে এর মাধ্যমে বিশ্ব শাসন-ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।


তিনটি ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্ব-ব্যবস্থাপনার চেহারা তুলে ধরব।


প্রথমতঃ ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা। এ ঘটনা প্রায় দশ বছর ধরে গোটা বিশ্বে প্রভাব ফেলছে।


হঠাৎ করেই টুইন টাওয়ারের ওপর হামলার খবর বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। বিশ্বের প্রায় সমস্ত সরকার ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব এ হামলার নিন্দা জানিয়েছিল।


প্রচারণার ঝড় বইয়ে দেয়া হল এই বলে যে, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ নামক এক নতুন বিপদের সম্মুখীন এবং এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল আফগানিস্তানে সেনা পাঠানো। শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান দখল করা হয় এবং অল্প কিছু দিন পরও ইরাকও দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে।

ভালোভাবে লক্ষ্য করুন;

বলা হয়েছে যে, ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। এ সব মৃত্যুর জন্য আমরা সবাই দুঃখিত। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইরাকে এ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ আহত ও শরণার্থী হয়েছে এবং সেখানে প্রতিদিনই সংঘাতের বিস্তার ঘটছে।


১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য কারা দায়ী বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে তিনটি মত প্রকাশিত হয়েছে:


১.খুবই শক্তিশালী ও জটিল এক সন্ত্রাসী চক্র যারা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের সমস্ত স্তর অতিক্রম করেছে। মার্কিন সরকারী কর্মকর্তাদের দিক থেকে এই মত বেশী প্রচারিত হয়েছে।


২. মার্কিন সরকারের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান মন্দা ঠেকাতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কর্তৃত্ব জোরদার করতে ও ইহুদিবাদী ইসরাইলকে রক্ষার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগণসহ বিশ্ববাসী ও রাজনীতিবিদরা এই মতে বিশ্বাসী।


৩. একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তবে তৎকালীন মার্কিন সরকার এই ঘটনার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ও এ ঘটনাকে ব্যবহার করেছে। দৃশ্যতঃ এ মতের সমর্থক অপেক্ষাকৃত কম।


অভিযোগের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে বিশাল ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে কয়েকটি পাসপোর্ট এবং কোনো এক ব্যক্তির একটি ভিডিও ক্যাসেট উদ্ধার করা হয়। এই ব্যক্তি কোথাকার অধিবাসী তা বলা হয়নি, তবে লোকটি তেলের ব্যবসায় কোনো কোনো মার্কিন কর্মকর্তার সহযোগী ছিলেন বলে জানানো হয়েছে। এটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কারণে আত্মঘাতি হামলাকারীদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কয়েকটি বড় বা মৌলিক প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি

প্রথমতঃ বিবেক বা যুক্তি কি এমনটা বলে না যে, প্রথমেই নিরপেক্ষ কিছু গ্রুপ দিয়ে এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করা উচিত ছিল এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিপূর্ণভাবে চিহ্নিত করে তাদের মোকাবেলার জন্য যৌক্তিক পরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল?

দ্বিতীয়তঃ মার্কিন সরকারের দাবী বা মতকে যদি সঠিক বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে এ প্রশ্ন উঠছে যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মোকাবেলার জন্য বিপুল সেনা-সমাবেশ, সর্বাত্মক ও পরিকল্পিত যুদ্ধ এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার দরকার হয়?


তৃতীয়তঃ ইরান যেভাবে রিগির সন্ত্রাসী গ্রুপকে মোকাবেলা করেছে সে রকম পদক্ষেপ কি নেয়া যেত না? রিগির সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় ইরানের চারশত নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মোকাবেলার জন্য ইরান যেসব অভিযান চালিয়েছে তাতে কোনো নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।


তাই আমরা ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ বা স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে পরবর্তীকালে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য বা মতামত প্রকাশ নিষিদ্ধ না করা হয়।


আমি এখানেই এটা ঘোষণা করছি যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আগামী বছর সন্ত্রাসবাদ সনাক্তকরণ ও তা মোকাবেলার সবচেয়ে ভালো পন্থাগুলো খুঁজে বের করার লক্ষ্যে একটি সম্মেলনের আয়োজক হবে। আমি দেশগুলোর কর্মকর্তা, চিন্তাবিদ, বিশ্লেষক, গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব প্রসঙ্গঃ

মজলুম ফিলিস্তিনী জাতি গত ৬০ বছর ধরে এক দখলদার শাসকগোষ্ঠী বা রেজিমের কর্তৃত্বাধীন। এ গোষ্ঠীর শাসনে ফিলিস্তিনী জাতি তার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত, অথচ দখলদার এই শক্তিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ফিলিস্তিনী নারী ও শিশুদের মাথার ওপর তাদের ঘর-বাড়ী ধ্বংস করছে দখলদার ইহুদিবাদীরা। ফিলিস্তিনী জনগণ তাদের দেশে পানি, খাদ্য ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত। ইহুদিবাদীরা এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনী জাতি ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাঁচ বার সর্বাত্মক বা ব্যাপক-বিস্তৃত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। লেবানন ও গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এ দখলদাররা নিরস্ত্র জনগণের সাথে জঘণ্যতম বা নিকৃষ্টতম আচরণ করেছে।


ইহুদিবাদী ইসরাইল সকল আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে গাজামুখী মানবিক ত্রাণবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে এবং এ জাহাজের বেসামরিক আরোহীদের হত্যা করেছে। পাশ্চাত্যের কোনো কোনো দেশ ইসরাইলী রেজিম বা শাসকগোষ্ঠীকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। ইহুদিবাদী ইসরাইল সব সময়ই এ অঞ্চলের দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে আসছে এবং আগাম ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনী ব্যক্তিত্ব ও অন্যদের হত্যা করছে; অথচ ফিলিস্তিনীদের সমর্থক এবং ইসরাইল-বিরোধীদেরকে সন্ত্রাসী ও ইহুদি-বিরোধী বলে প্রচার করে তাদের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সমস্ত মূল্যবোধকে ও এমনকি বাক-স্বাধীনতাকেও ইহুদিবাদের পায়ের তলায় বলি দেয়া হয়েছে।


ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকারের প্রতি দৃষ্টি না দেয়ার কারণে এ সংকট সমাধানের সমস্ত পথ ব্যর্থ হয়েছে।


যদি সেই প্রথম থেকেই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি না দিয়ে ফিলিস্তিনী জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নেয়া হত তাহলে কি আজ এইসব অপরাধ সংঘটিত হত? সকল ফিলিস্তিনী শরণার্থীকে তাদের নিজ দেশে ফিরতে দেয়ার স্পষ্ট প্রস্তাব দিচ্ছি আমরা। ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসীদের দিয়ে এক গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সার্বভৌমত্বের চর্চা করতে দেয়ার ও সেখানে তাদের পছন্দের সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাবও দিচ্ছি।

পরমাণু শক্তি প্রসঙ্গ

পরমাণু জ্বালানী পরিস্কার বা দূষণমুক্ত, সস্তা ও খোদার দেয়া নেয়ামত। ফসিল জ্বালানীর কারণে যেসব দূষণ দেখা দেয় তা কমানোর জন্য এ জ্বালানী শ্রেষ্ঠ বিকল্প। পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা N.P.T-তে স্বাক্ষরকারী সকল দেশ কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই এ জ্বালানী শক্তি ব্যবহারের অধিকার রাখে। এ ব্যাপারে কারিগরি ও আইনী সহায়তা দেয়া আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বা আই ই ই এ' র দায়িত্ব।


পরমাণু বোমা মানব-বিধ্বংসী সবচেয়ে খারাপ বা নিকৃষ্ট অস্ত্র। তাই এ বোমা পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।


পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা N.P.T পরমাণু বোমার উন্নয়ন ও এর মজুদ গড়ে তোলাকে নিষিদ্ধ করেছে এবং নিরস্ত্রীকরণকে জরুরী বলে উল্লেখ করেছে।


কিন্তু আপনারা দেখুন পরমাণু বোমার অধিকারী কিছু শক্তি ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসনধারী কোনো কোনো শক্তি কি করেছেঃ


এই শক্তিগুলো বেসামরিক পরমাণু জ্বালানীকে পরমাণু বোমা বলে প্রচার করছে এবং এর ওপর একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের বেশীরভাগ জাতিকেই এই শক্তি হতে বঞ্চিত করেছে। অন্যদিকে এ শক্তিগুলো নিজেদের পরমাণু বোমার মজুদ টিকিয়ে রেখেছে এবং এমনকি এর উন্নয়নের কাজ করছে। আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, মার্কিন সরকার চলতি বছর পরমাণু বোমা খাতে আট হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে।

এর ফলে যা হয়েছেঃ

নিরস্ত্রীকরণ তো ঘটেইনি বরং দখলদার ইসরাইলের পরমাণু বোমার মজুদসহ কোনো কোনো অঞ্চলে পরমাণু বোমার উৎপাদন ও ইহুদিবাদী হুমকীর বিস্তার ঘটেছে।


আমি এখানেই এ প্রস্তাব দিচ্ছি যে "পরমাণু জ্বালানী সবার জন্য ও পরমাণু বোমা কারো জন্য নয়" এই শ্লোগানের ভিত্তিতে দুই হাজার ১১ সালকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বছর ঘোষণা করা হোক।


এতক্ষণ পর্যন্ত আমি যেসব সংকট বা ইস্যুর কথা বললাম এর কোনোটির ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম নয়। দুঃখজনকভাবে শান্তির দশক বলে ঘোষিত এ দশকেও যুদ্ধ, আগ্রাসন, দখলদারিত্বের ঘটনা ঘটেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ হতাহত হয়েছে ও বেড়েছে বিদ্বেষ আর শত্রুতা ।

ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়বৃন্দ,

সম্প্রতি আমরা পবিত্র কোরআন পোড়ানোর মত নোংরা ও মানবতা-বিরোধী পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ করেছি। পবিত্র কোরআন খোদায়ী বা ঐশী ধর্মগ্রন্থ এবং এটা বিশ্বনবী (সাঃ)'র চিরস্থায়ী বা চিরন্তন মোজেজা (অলৌকিক নিদর্শন)। এ মহাগ্রন্থ মানুষকে এক আল্লাহর এবাদত, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মানুষকে ভালবাসা, পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করার, চিন্তা-ভাবনা করার এবং মজলুমদের সহায়তা করা ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান জানায়। পবিত্র কোরআন হযরত নূহ (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ), ইসহাক (আঃ), ইউসুফ (আঃ), মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)'র মত ঐশী প্রেরিত পুরুষ বা নবী-রাসূলদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে এবং তাঁদের নবুওয়্তকে সত্যায়িত করেছে। এ মহাগ্রন্থ পোড়ানোর মাধ্যমে এ সব বাস্তবতা ও জ্ঞানকে পোড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বা সত্যকে কখনও পোড়ানো যায় না। পবিত্র কোরআন আল্লাহ ও বাস্তবতা বা সত্যের মতই চিরস্থায়ী। এ পদক্ষেপ ও যে কোনো পদক্ষেপ যা জাতিগুলোর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে তা শয়তানের কাজ বা অসৎ পদক্ষেপ।

তাই শয়তানের ফাঁদ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আমি ইরানী জাতির পক্ষ থেকে সমস্ত ঐশী গ্রন্থ ও এসব গ্রন্থের অনুসারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এটা হচ্ছে কোরআন এবং এটা হচ্ছে বাইবেল বা ঈঞ্জিল। আমরা এ উভয় বইকেই শ্রদ্ধা করি।

শ্রদ্ধেয় বন্ধুরা,

বহু বছর আগেই পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গী ও বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা এবং এর কাঠামোগুলোর ব্যর্থতা বা অকার্যকারিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশ ও জাতি এ ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন চায় এবং তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ন্যায়-বিচারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। জাতিসংঘের অক্ষমতা বা ব্যর্থতার কারণ হল এর অন্যায্য কাঠামো।


ভেটো-ক্ষমতার কারণে মূল ক্ষমতা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং মূল স্তম্ভ তথা সাধারণ পরিষদের ক্ষমতা খুবই গৌণ করা হয়েছে।


গত কয়েক দশকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্ততঃ একটি স্থায়ী সদস্য নিজেই সংঘাতের একটি পক্ষ ছিল। যখন বিচারক ও উকিল একটি বিরোধ বা মামলার এক পক্ষ হন, তখন কিভাবে এর কার্যাকারিতা আশা করা যায়? কারণ, ভেটো ক্ষমতার কারণে আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব শাস্তি বা বিচারের সম্মুখীন হয় না।


পরমাণু সংক্রান্ত বিতর্কে ইরানের যদি ভেটো ক্ষমতা থাকত তাহলে কি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালকের আচরণ এ ধরনের হত?

প্রিয় বন্ধুরা,

জাতিসংঘ অভিন্ন বিশ্ব-ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় সাধনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এর কাঠামোয় এমন সংস্কার আনা উচিত যাতে সব জাতি ও সরকার বিশ্ব-ব্যবস্থাপনায় স্বাধীনভাবে গঠনমূলক ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।


ভেটো ক্ষমতা বিলুপ্ত করা উচিত। সাধারণ পরিষদকে করতে হবে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতা-সম্পন্ন বা সর্বোচ্চ বডি।

জাতিসংঘের মহাসচিবকে হতে হবে সবচেয়ে স্বাধীন ব্যক্তিত্ব এবং তার সমস্ত অবস্থান ও পদক্ষেপ সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে স্বীকৃত হতে হবে; আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য দূর করাই তার সমস্ত অবস্থান ও পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।


সত্য প্রকাশ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মহাসচিবকে বৃহৎ শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে কিংবা জাতিসংঘের দপ্তর যে দেশে অবস্থিত সে দেশের পক্ষ থেকে কোনো চাপ দেয়া যাবে না।


এখানেই এ প্রস্তাব দিচ্ছি যে, আগামী এক বছরের মধ্যেই একটি জরুরী বৈঠকের মাধ্যমে জাতিসংঘের সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


এ ব্যাপারে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কিছু স্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে এবং তেহরান এ ব্যাপারে সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।

ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়বৃন্দ,

আমি এখানে এটা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি যে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়ার অজুহাতে কোনো দেশে হামলা চালানো ক্ষমার অযোগ্য বড় অপরাধ।


শক্তি বা ক্ষমতার যুক্তি ও একচেটিয়া কর্তৃত্ব, একদেশদর্শিতা, যুদ্ধ ও হুমকির যুক্তির বদলে ভালবাসা, ন্যায়বিচার ও সকলের অংশগ্রহণের নীতি বিশ্বের জন্য জরুরী। নবী-রাসূলদের মত পবিত্র ব্যক্তি বা ঐশী প্রেরিতপুরুষদের পরিচালনার নীতি বিশ্বের জন্য জরুরী।


গত এক দশকে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার মত দু'টি বিশাল অঞ্চলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। এ দুই অঞ্চলের জাতিগুলোর মধ্যে যথাসম্ভব দৃঢ়তর ঐক্য ও সহমর্মিতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী, উন্নয়ন মডেলগুলোর স্থানীয়করণ বা দেশীয়করণ জোরদার হয়েছে। আর এসবের দর্শনীয় সুফল ভোগ করছে এ দুই অঞ্চলের মানুষ। এ দুই মহাদেশের নেতৃবৃন্দ বিচক্ষণ ও সতর্ক হওয়ায় তারা দূরবর্তী অঞ্চলের কোনো শক্তির কর্তৃত্বকামী হস্তক্ষেপ ছাড়াই আঞ্চলিক সংকটগুলো নিরসন করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সাথে সব ধরনের সম্পর্ক জোরদার করেছে।


মাথা উচু করে দাঁড়ানো ইরান প্রসঙ্গ

আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে তেহরান ঘোষণা ছিল একটি বড় ও গঠনমূলক পদক্ষেপ। ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইরান সরকারের উপযুক্ত ও মানবিক পদক্ষেপ এবং আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ওই ঘোষণা বা ইশতেহার প্রণীত হয়েছে। যদিও এ ঘোষণা অনৈতিক আচরণ ও নিরাপত্তা পরিষদের অবৈধ ঘোষণার সম্মুখীন হয়েছে, তা সত্ত্বেও এ ঘোষণা এখনও গ্রহণযোগ্য।


আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশী মাত্রায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আই এ ই এ'র আইনগুলো মেনে চলেছি। কিন্তু আমরা কখনও অবৈধ কিছু চাপিয়ে দেয়াকে মেনে নেইনি এবং ভবিষ্যতেও মানব না।


বলা হয়েছে, তারা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ইরানকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে চায়।


প্রথমতঃ ইরান সব সময়ই সম্মান ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ জাতিগুলোর প্রতি অশ্রদ্ধা বা অবমাননা-ভিত্তিক পদ্ধতিগুলো বহুকাল আগ থেকেই কার্যাকারিতা হারিয়েছে। যারা ইরানের স্পষ্ট যুক্তির মোকাবেলায় হুমকী ও নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করছে তারা আসলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অবশিষ্ট সম্মান ও এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি জাতিগুলোর আস্থাকে ধ্বংস করছে। এই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তৎপরতা যে কত অন্যায্য বা অবিচারপূর্ণ তা আরো একবার প্রমাণিত হল।


শিল্প, সভ্যতা, পবিত্রতা, এক আল্লাহর এবাদত ও ন্যায়বিচারকামীতার ক্ষেত্রে ইরানী জাতির এত সুনাম থাকা সত্ত্বেও এরা যখন মহান ইরানী জাতির সাথে এ ধরনের আচরণ করছে, তখন তারা কিভাবে এটা আশা করে যে জাতিগুলো তাদের প্রতি আস্থাশীল হবে?


প্রিয় বন্ধুরা,

সবাই এটা জানেন যে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও বিশ্ব-ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্বকামী পদ্ধতিগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কেবল দাসপ্রথা ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার যুগই শেষ হয়ে যায়নি, বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব করার দিনও অতীত হয়ে গেছে এবং সাম্রাজ্যগুলো পূনর্গঠনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।


আমরা এটা ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু বা সমস্যার বিষয়ে মার্কিন সরকারের সাথে এখানেই উন্মুক্ত এক বিতর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরতে প্রস্তুত। আমি এখানেই এ প্রস্তাব দিচ্ছি যে প্রতি বছর গঠনমূলক সংলাপ বা বিতর্কের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আসনের ব্যবস্থা করুন।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধু ও সহযোগীরা,

ইরানী জাতিসহ বিশ্বের জাতিগুলো ও বিশ্বের সরকারগুলো বর্তমান বৈষম্যমূলক বিশ্বব্যবস্থাপনার বিরোধী। অমানবিক এ পন্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে এবং এর আমূল সংস্কার জরুরী।


বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির সংশোধন বা সংস্কার, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সৌভাগ্য নিশ্চিত করার জন্য সবার অংশগ্রহণসহ পবিত্র চিন্তাধারা এবং খোদায়ী ও মানবিক ব্যবস্থাপনা জরুরী।


আমরা সবাই এটা বিশ্বাস করি যে , স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার মূল চাবি হল ন্যায়বিচার। মানুষে মানুষে ও জাতিগুলোর মধ্যে প্রেম প্রীতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্যও এই ন্যায়বিচার অপরিহার্য। একমাত্র ন্যায়বিচারের ছায়াতলেই মানবজাতি তাদের স্বপ্ন-সাধ, অধিকার ও সম্মান খুঁজে বেড়ায়। মানবজাতি অত্যাচার, অনৈতিক আচরণ ও অবমাননাকে ঘৃণা করে। মানুষ ও ভালো বিষয়গুলোর প্রতি প্রেমের মধ্যেই মানবীয় বাস্তবতা ফুটে উঠে। ভালবাসাই মানুষ ও জাতিগুলোর মধ্যে সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ ভিত্তি। ভাহশী বাফক্বী নামের একজন প্রখ্যাত ইরানী কবি বলেছেন,


اگر صد آب حَيوان (آب حيات) خورده باشي چو عشقي در تو نبود مرده باشي


অর্থাৎ, আবেহায়াত বা চির-যৌবনের ঝর্ণা থেকে যদি শত বারও পানি পান কর তবুও প্রেম না থাকলে তুমি মারা যাবে।


পবিত্র, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার পথে মানুষ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তারা একে-অপরের সহযোগী।


যারা অন্যদের কষ্টের মধ্যে নিজেদের জন্য আনন্দ, অন্যদের দারিদ্রের মধ্যে নিজেদের সমৃদ্ধি ও অন্যদের অনিরাপদ করার মধ্যে নিজেদের আনন্দ খুঁজে পায় এবং নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করে তারা মানবতার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং শয়তানের পথে রয়েছে।


অর্থনীতি ও বিশ্বের সম্পদ অন্যদের সেবার উপকরণ এবং এগুলো বন্ধুত্ব ও মানবীয় সম্পর্কসহ আধ্যাত্মিক পূর্ণতারও মাধ্যম, কর্তৃত্বকামীতা ও অহংকার প্রকাশের হাতিয়ার নয়।


নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক, পরিবার ও পবিত্র সম্পর্ক, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর প্রেমময় ও স্থায়ী সম্পর্ক পরবর্তী প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত করা এবং বংশধারা অব্যাহত রাখার গ্যারান্টি। প্রকৃত সুখ রয়েছে ভালবাসার বিস্তার ও সমাজ সংশোধনের মধ্যে। নারী বা স্ত্রী জাতি মহান আল্লাহর সৌন্দর্য্যের প্রকাশ, ভালবাসার নীড় এবং সমাজে দয়া বিস্তারসহ পবিত্রতা ও কোমল প্রকৃতি সংরক্ষণের অভিভাবক।


নারীর আচরণ ও মন কঠোর হয়ে যাওয়া এবং তাদেরকে মাতৃসুলভ ও স্ত্রীসুলভ দয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সমাজে সহিংসতা সৃষ্টির কারণে পরিণত হবে। এর ফলে সমাজের ক্ষতির দিকগুলো হবে অপূরণীয়। স্বাধীনতা এমন এক খোদায়ী বিধান যাকে শান্তি ও মানবীয় পূর্ণতার সেবায় কাজে লাগানো উচিত।

প্রিয় সহযোগীবৃন্দ,

সৎ-চিন্তা ও সৎ লোকদের প্রতিজ্ঞা কল্যাণময় জীবনের চাবিকাঠি, যে জীবন অফুরন্ত আশা, আনন্দ ও সৌন্দর্য্যে ভরপুর।


এটা মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি যে তিনি বিশ্বের ওপর সৎ ও পবিত্র লোকদের নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আত্মস্বার্থকেন্দ্রীকতা বা স্বার্থপরতার দাসত্ব থেকে মুক্ত মানুষেরা পৃথিবী পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন। আর তখন দুঃখ, বৈষম্য, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা ও আগ্রাসন থাকবে না এবং মানুষের প্রকৃত সুখ বা আনন্দ ও মহান আল্লাহর পছন্দনীয় মানবীয় প্রকৃতি বিকশিত হবার সুদিন আসবে।


ন্যায়বিচার ও মুক্তিকামী সকল মানুষ এই দিনের জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং এই গৌরবময় সময় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


সেই আদর্শ তথা পরিপূর্ণ মানুষ, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ও মানবজাতির প্রকৃত সুহৃদের পিতা ইসলামের প্রিয়নবী (সাঃ)'র বংশধর এবং তাঁর মা হযরত ঈসা (আঃ)'র উম্মতের বংশধর। তিনি হযরত ঈসা বিন মরিয়ম (সাঃ)সহ ও অন্য সৎকর্মশীলদের নিয়ে সে যুগের জন্য অপেক্ষা করছেন যে যুগে বাস্তবায়িত হবে সেই সোনালী দিনের শাসন এবং তিনি গোটা মানবজাতিকে সহায়তা দেবেন। তাই আসুন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একে-অপরের সহযোগী হয়ে এই মহাপুরুষদের অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যাই।


প্রেমের প্রতি সালাম, এবাদতের প্রতি সালাম, সালাম জানাই ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতাকে এবং সালাম জানাই মানুষের প্রকৃত প্রকৃতিকে। সালাম জানাই পরিপূর্ণ বা আদর্শ মানবকে, মানুষের প্রকৃত বন্ধুকে এবং সালাম জানাচ্ছি সকল সৎকর্মশীল ও পবিত্র ব্যক্তিদের। আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। ধন্যবাদ। #