বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, বতর্মান মহাজোট সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তারা করবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাদের মদতে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বছরজুড়ে সংঘটিত বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সরকারের ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে না এলে সরকারকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাত্রা এ বছর ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকারিভাবে ইসলামবিরোধী নানা পদক্ষেপ এবং বক্তব্য-বিবৃতির পাশাপাশি বেশ তত্পর ছিল বেসরকারি বিভিন্ন মহল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ উঠিয়ে দেয়া, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ফতোয়া নিষিদ্ধ, সমঅধিকার আইন করার সরকারি ঘোষণা এবং বোরকাবিরোধী আইন করার পাশাপাশি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি, জেহাদি বইয়ের নামে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যবিরোধী অপপ্রচার, বোরকা ও টুপিধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীল নৃত্যসহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের মতে, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রের বছর। এ বছর ইসলাম ও দেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদার ওপর মারাত্মক আঘাত আসে। আর এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে দেশের প্রায় সব ইসলামী দলসহ ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মুখর ছিল পুরো বছর। নির্বাচনের আগে ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ বলে ওয়াদা করলেও বর্তমানে তা ভঙ্গ করায় আ’লীগ সরকারকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে ইমান ও ইসলাম রক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে সরকারের পুলিশবাহিনীও ছিল কঠোর অবস্থানে।
এ বছরের শুরুর দিকেই একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এ ঘোষণাকে পবিত্র কোরআনের মিরাছি আইনবিরোধীআখ্যায়িত করে তার প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন ইসলামী দল। কোনো অবস্থাতেই মিরাছি আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে ওলামারা জানান। এর কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন, সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে। এই বক্তব্যে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ ফতোয়া ইসলামের বিধান। মুসলমানদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কোনোভাবেই ফতোয়া বন্ধ করা যাবে না বলে তাদের অভিমত। মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠান কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়। এছাড়া বছরের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করলে তীব্র প্রতিবাদ জানান ধর্মপ্রাণ মানুষ।
এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকাপরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশিন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই-পুস্তককে জিহাদি বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের মাধ্যমে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার খবরে সব মহলে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয় অর্ধশতাধিক ছাত্রী। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক। এছাড়া অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এসব ঘটনার মাধ্যমেই সারাদেশে ইভটিজিং ও অসামাজিক কার্যকলাপ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক।
বছরজুড়েই আলোচিত ছিল ’৭২-এর সংবিধান চালু ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে ’৭২-এর সংবিধান চালুর ঘোষণায় আতঙ্কে ছিল ইসলামী দলগুলো। কারণ এটি চালু হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। এজন্য শুরু থেকেই তারা এর বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু শত বিরোধিতা সত্ত্বেও এবছর হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হয়। এর পরপরই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলতে থাকেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ শেষ হয়ে গেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবে ইত্যাদি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে না। এরপরও অন্য মন্ত্রী-এমপিরা এই রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিনিময়ও হয়। মন্ত্রীরা বলেন, ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করবে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়, এ দায়িত্ব সরকারের, ইসির নয়।
এদিকে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের এ তত্পরতায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোতে টনক নড়ে। দেশের প্রায় সব ইসলামী দল পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ করে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারকে হুশিয়ার করে।
এ বিষয়ে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি পালন করে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ইসলামী আন্দোলন। গত ৫ নভেম্বর মুক্তাঙ্গনে দলটির মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
একইভাবে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও ইসলামী ঐক্যজোট একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামী দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে।
ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুর পরপরই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু। বর্তমান সরকার নাস্তিক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। পরে ওই কমিটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয় তা প্রত্যাখ্যান করে সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং গত ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা এই শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে কোনোভাবেই এই নীতি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে এই শিক্ষানীতি সংশোধনের দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দেয়। অবশ্য পরে তা সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে স্থগিত করা হয়। এছাড়া এই শিক্ষানীতি সংশোধন বা বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। কওমী মাদ্রাসার বোর্ড সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে অক্টোবরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির প্রেক্ষিতে সারাদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সিদ্ধান্তকে কোরআনের বিধান পরিপন্থী এবং নারীদের বেপর্দা করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল জিহাদি বই। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে। জিহাদি বই উদ্ধারের নামে পুলিশ নিয়ে যায় মূল্যবান ইসলামী বইপত্র। অথচ এসব বইয়ের কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়। পুলিশের এ তত্পরতায় সারাদেশে জিহাদি আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের মাঝেও। সরকারের পুলিশবাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হলেও তাদের অপতত্পরতা অব্যাহত রয়েছে।
এবছর সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নানা অনৈসলামিক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও ছিল বেশ আলোচিত। প্রতিষ্ঠানটির ডিজি হিসেবে বর্তমান সরকার নিযুক্ত সামীম মোহাম্মদ আফজালের নেতৃত্বেই এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড হয়। ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র, অশ্লীল গানবাজনা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে অশ্লীল উদর-নৃত্য প্রদর্শনের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের কারণে ইফা ডিজির অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন।
সরকারের এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ইসলামবিরোধী নানা বক্তব্য-বিবৃতি ছিল আলোচিত বিষয়। আগস্টে দেব নারায়ণ মহেশ্বর নামে এক ব্যক্তি কোরবানি বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভের একপর্যায়ে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে আটক করা হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি স্টেডিয়ামে ‘কিংখান লাইভ শো’র নামে ভারতীয় শিল্পীদের এনে অশ্লীল ও নগ্ন নাচগানের আয়োজনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন মহল। এছাড়া ইসলামবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেশের স্বার্থবিরোধী ইস্যুতে বছরজুড়েই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন প্রতিবাদমুখর। তবে সরকার পুলিশবাহিনী দিয়ে প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন ইসলামী দলের বেশকিছু কর্মসূচিতে হামলা চালায় পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এতে আহত হন অনেক নেতাকর্মী।
গত এক বছর দেশে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলামবিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়। তারা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বরদাশত করতে পারেনি। তারা ইসলামবিদ্বেষী, ভারতপ্রেমী। এজন্য তারা ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেয় না। তারা বাকশালী কায়দায় স্বৈরশাসন চালাতে চাচ্ছে। তাই এ সরকার থেকে রক্ষা পেতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। তাছাড়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করা যাবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার বছর। এ বছর ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অশ্লীল গানবাজনা আর নারীদের নগ্ন প্রদর্শনীসহ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংসের অপপ্রয়াস চলেছে। তিনি বলেন, এ বছর ফতোয়া নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। জঙ্গিবাদের কথা বলে ইসলামী দল ও নেতাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষ কোরআন-হাদিস ও ইসলামী বই পড়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর সরকার জিহাদি বইয়ের ধোয়া তুলে এসব বই পড়ার প্রতি মানুষের অনাগ্রহ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছে। অথচ সরকার এসব বইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সাহস করেনি।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, তুর্কি ও স্পেনের স্টাইলে মুসলমানদের এ বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম নির্মূলের মিশন বাস্তবায়ন করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তাদের ক্ষমতা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, দেশ, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তত বেশি বিপদ ঘনিয়ে আসবে। দেশ ও ইসলামের স্বার্থেই এ সরকারের পতন তরান্বিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুভার যাদের হাতে ন্যস্ত, তারা যখন অন্যায়-অনাচার, পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষের মাঝে যখন গুনাহের কাজ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেদেশ ও জাতির ওপর আল্লাহর গজব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সম্প্রতি দেশের নানা ঘটনাপ্রবাহে সে গজবের অশনিসঙ্কেত শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইসলামবিরোধী এমন সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা এর আগে এদেশে কল্পনা করাও কঠিন ছিল।