বিশিষ্ট সাংবাদিক এ বি এম
মূসা বলেছেন, আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয়
দেওয়া শুধু মানবিক ও নীতিগত বিষয় নয়, এটি আমাদের ধর্মীয় ও জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)
মক্কা থেকে হিযরত করে মদিনায় গেলে মদিনাবাসী যদি আশ্রয় না দিতেন তাহলে পৃথিবীতে
ইসলাম বলে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতো না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কিন্তু আমাদেরই পূর্ব পুরুষ। বাঘের ভয়ে পালিয়ে
আসা এসব মানুষকে আমরা আবার বাঘের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী
সমস্যা এবং বাংলাদেশের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানানোর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ
প্রতিদিনকে এক সাক্ষাৎকারে এ বি এম মূসা এ কথা বলেন। প্রবীণ এই সাংবাদিকের কাছে
জানতে চাওয়া হয়েছিল, সরকার বলছে রোহিঙ্গাদের
আশ্রয় দেওয়া যাবে না। কারণ, মিয়ানমারে এখন
যুদ্ধকালীন অবস্থা নয়, অভ্যন্তরীণ
দাঙ্গা চলছে। এই অবস্থাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
এ বি এম মূসা : যুদ্ধকালীন অবস্থা হোক কিংবা
গৃহযুদ্ধ চলুক, সেটা বড় কথা নয়। কিছু লোক
বিপদগ্রস্ত হয়ে আশ্রয় চেয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত।
শুধু দেখতে হবে, এ কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থ
ক্ষুণ্ন হচ্ছে কিনা। সব কিছুর ঊধের্্ব হচ্ছে মানবিকতা। আমাদের প্রিয় নবী হজরত
মুহম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিযরত করলেন, তখন তাকে যারা আশ্রয় দিলেন তারা সবাই ছিলেন ইহুদি। তা
সত্ত্বেও তারা নবী করিম (সা.) এবং তার সাহাবিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আগের দফায় রোহিঙ্গারা এসে
অনেক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সেই অভিজ্ঞতার পর কীভাবে তাদের আশ্রয় দেওয়া
যায়?
এ বি এম মূসা : রোহিঙ্গারা আগের বার এসে অনেক
সমস্যা সৃষ্টি করলেও এ জন্য শুধু তারা দায়ী নয়। দায়ী হচ্ছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী ও সরকারের ব্যর্থতা। নিজেদের অতীতের ব্যর্থতার কারণে এখন অন্যরকম ব্যবহার
করব_সেটা হয় না। অতীতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে সব
সমস্যা হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
রোহিঙ্গারা এদেশে এসে আমাদের লোকদের সহায়তায় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এ জন্য যে সব
দুষ্কৃতিকারী জড়িত, তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের আশ্রয় না দেওয়ার
সিদ্ধান্তকে অনেকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন।
এ বি এম মূসা : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালে ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তখন আমাদের যে শরণার্থী শিবিরগুলো ছিল সেগুলো
ঘেরাও করে রাখা ছিল, যাতে শরণার্থীরা মূল
জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশতে না পারেন। একইভাবে রোহিঙ্গাদেরও ছোট ছোট দ্বীপে রাখার
ব্যবস্থা করা যায়। আমাদের অনেক ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ রয়েছে। সেখানে তাদের
সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে। তাদের ভরণ পোষণের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ
প্রয়োজন। যারা তাদের আশ্রয় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে, সেসব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে
পারে। শ্রীলঙ্কার তামিলদের বছরের পর বছর আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়
দিচ্ছে সারা বিশ্ব। ১৯৭১ সালের আগে দাঙ্গার কারণে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক বাঙালি
পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভেদের কারণে এক দেশ থেকে অন্য
দেশে আশ্রয় চায় মানুষ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকার খাদ্য সহায়তা দিয়ে
রোহিঙ্গাদের বিদায় করে দিচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এ বি এম মূসা : বাঘের ভয়ে পালিয়ে আসা লোককে আমরা
আবার বাঘের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। এ ব্যাপারে সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে কোনো কথা
বলেনি। সরকার জাতিসংঘের কাছে নালিশ জানাতে পারত। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি
সারা বিশ্ব ঘুরে বাংলাদেশের জন্য সাহায্য চেয়েছেন এবং পেয়েছেন। বাংলাদেশে এখন
মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধানকে অভ্যর্থনা জানাতে তোড়জোড় চলছে। আমাদের রাষ্ট্রদূত কেন
এখনো মিয়ানমার যাননি। মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো আলোচনা বৈঠকও করেননি। তাদের দেশের
লোকদের নিয়ে এখন যে সমস্যা, তার জন্য
মিয়ানমারের সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে। রোহিঙ্গারা আমাদেরই পূর্ব পুরুষ। দায়িত্ব পালন
না করে তাদের আবার বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না।
সৈজন্যেঃ- বাংলাদেশ প্রতিদিন ২১-০৬-২০১২